চকরিয়া উপজেলার চিংড়ীজোন নামে খ্যাত চিরিংগা ইউনিয়নের চরন্ধীপ এলাকার চিংড়িঘেরে দুটি অস্ত্র তৈরির কারখানার সন্ধান পেয়েছে । র্যাব কারখানা দুটির চারদিক ঘিরে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ।
এ সময় আটক করা হয় ছয়জন সন্ত্রাসীকে। এদের মধ্যে অস্ত্র তৈরির কারিগর এবং অন্যরা সন্ত্রাসী ও অস্ত্র বিক্রেতা বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত করেছে র্যাব। আজ রবিবার ভোররাতে এ অভিযান চালানো হয়।
র্যাব সূত্র জানায়, চকরিয়া উপজেলার চিংড়িজোন চিরিঙ্গা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের চরণদ্বীপ ও সওদাগরঘোনা এলাকায় অবস্থিত চিংড়িঘেরের কাছে অস্ত্র তৈরির কারখানা দুটির সন্ধান পায়। সেখানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ মজুদ রয়েছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে সেখানে অভিযান চালায় র্যাব। এ সময় কারখানা থেকে উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ দেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ। আটক করা হয় ছয়জনকে।
অভিযানে নেতৃত্ব দানকারী র্যাব-৭ কক্সবাজার ক্যাম্পের উপপরিচালক (কম্পানি কমাণ্ডার) মো. শরাফত ইসলাম বলেন, “আমরা অভিযান শেষ করে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছি। আজ রবিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযানের বিষয়ে সাংবাদিকদের বিস্তারিত জানানো হবে। ” তবে কী পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার এবং কয়জনকে আটক করা হয়েছে- এমন প্রশ্নের উত্তরে শরাফত ইসলাম বলেন, “ধারণা করছি উদ্ধারকৃত আগ্নেয়াস্ত্রের পরিমাণ ২০টির অধিক হবে। এ ছাড়া বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদসহ ছয় সন্ত্রাসীকে আটক করি। এদের মধ্যে অস্ত্র তৈরির কারিগরও রয়েছে। ” র্যাবের সংবাদ সম্মেলন চলছে।
র্যাব জানিয়েছে—-
কক্সবাজারের চকরিয়া থানাধীন এলাকায় একাধিক দেশীয় অস্ত্র তৈরীর কারখানা রয়েছে- এমন বিশ্বস্ত গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৭ এর একটি চৌকষ আভিযানিক দল ব্যাপক কর্মতৎপরতা শুরু করে। দীর্ঘদিনের নিবিড় পর্যবেক্ষন ও গোয়েন্দা তৎপরতার এক পর্যায়ে র্যাব-৭ জানতে পারে যে, কক্সবাজার জেলার চকরিয়া থানাধীন চিরিংগা ইউনিয়নের চরনদ্বীপ দোলখালীপাড়ায় কতিপয় সংঘবদ্ধ অস্ত্র ব্যবসায়ী ও অস্ত্র তৈরীর কারিগর সহ দীর্ঘদিন ধরে দেশীয় অস্ত্র তৈরি করে এলাকায় স্থানীয় সন্ত্রাসী, অস্ত্র ব্যবসায়ী, অবৈধ অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা ও ডাকাতদের কাছে অস্ত্র বিক্রি করে আসছে এবং এ সমস্ত অস্ত্র দিয়ে কক্সবাজারের চকরিয়া ও পাশ্ববর্তী এলাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে খুন, মুক্তিপন, অপহরন ও ডাকাতিসহ বিভিন জঘন্য অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে অদ্য ০৪ ডিসেম্বর ২০১৬ ইং তারিখ ভোর ০৪.০০ ঘটিকা হইতে সকাল ১০.০০ ঘটিকা পর্যন্ত মেজর মাহমুদ হাসান তারিক, সিনিয়র এএসপি শাহেদা সুলতানা এবং এএসপি সৈয়দ মোহসিনুল হক এর নেতৃত্বে র্যাবের একটি চৌকষ আভিযানিক দল কক্সবাজার জেলার চকরিয়া থানাধীন চিরিংগা ইউনিয়নের চরনদ্বীপ দোলখালীপাড়ায় অভিযান পরিচালনা শুরু করলে কারিগররা দৌড়ে পালাতে চেষ্টা কালে র্যাব সদস্যরা তাদেরকে কৌশলে ঘিরে ফেলে এবং আসামী ১। আব্দুল মান্নান (৩৫), ২। আইয়ুব খান (২৭), উভয়ের পিতাঃ নুর মোহাম্মদ @ ধলা মিয়া মাঝি, গ্রামঃ উত্তর দুরুম ১নং ওয়ার্ড, থানাঃ কুতুবদিয়া, জেলাঃ কক্সবাজার ৩। নুরুল আলম (৫০), পিতাঃ মৃত আব্দুল বাসদ @ বাসু, গ্রামঃ ইতমনি, থানাঃ চকরিয়া, জেলাঃ কক্সবাজার, ৪। মহিউদ্দিন @ মহিন মিয়া (২৪), পিতাঃ আমির হোসেন, গ্রামঃ কাজির পাড়া, থানাঃ কুতুবদিয়া, জেলাঃ কক্সবাজারদেরকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে উক্ত স্থানে অস্ত্রের কারখানা তল্লাশী করে ২০ টি বিভিন্ন ধরনের সক্রিয় অস্ত্র (এসবিবিএল- ০৮টি, ডিবিবিএল- ০১টি, .৩০৩ দেশীয় রাইফেল-০২, .২২ দেশীয় রাইফেল-০১টি এবং ওয়ান শুটারগান- ০৮টি), ৪৯ রাউন্ড তাজা গুলি (৪৫ রাউন্ড শর্টগানের গুলি, ০৪ রাউন্ড .৩০৩ দেশীয় রাইফেলের গুলি), পোচ-০৩ টি, পোচ বেল্ট-০২ টি এবং অস্ত্র তৈরীর মেশিন ও যন্ত্রাংশ (লেথ মেশিন-০২ টি, হাত ড্রিল-০১ টি, হেক্সা মেশিন-০২ টি, হেক্সাব্লেড, ট্রিগার গার্ড-০৩ টি, বাট-০১ টি, পাইপ-০৪ টি, হাতুড়ি-০৩ টি, স্ক্রু ড্রাইভার, রেত, কাটিং মেশিন, বিশেষ ধরনের প্লাস, পাইফ-০৪ টি, ট্রিগার গার্ড-০৩ টি, বাট-০১ টি, হাতুড়ি-০৩ টি, বাটাল, ¯িপ্রং, নাট/ভোল্ট ইত্যাদি ) উদ্ধার করা হয় এবং আসামীদেরকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজার জেলার চকরিয়া থানাধীন চিরিংগা ইউনিয়নের চরনদ্বীপ একানব্বই পাড়ায় অভিযান চালিয়ে তাদের সহকর্মী ৫। জোনুয়ারা বেগম (৩৮), স্বামীঃ মোঃ নুরুল ইসলাম, গ্রামঃ ছাড়িয়া খালী, থানাঃ চকরিয়া, জেলাঃ কক্সবাজার, বর্তমান ঠিকানাঃ চরনদ্বীপ দোলখালী পাড়া, চিরিংগা ইউনিয়ন, থানাঃ চকরিয়া, জেলাঃ কক্সবাজার, ৬। নুরল্লা (৪৫) পিতা- মৃত ইাদ্রস আহাম্মেদ, গ্রামঃ চাইরা খালী, পাশিয়াখালী ইউপি, থানাঃ চকরিয়া, জেলাঃ কক্সবাজারদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
পাঠকের মতামত: